নিজ প্রশাসনের উর্ধতন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশঙ্কা করেছেন, করোনাভাইরাসে এক থেকে দুই লাখে মৃত্যু হবে আমেরিকায়। তিনি বলেন, আমরা এমনটি হতে দিতে চাই না। এ মৃত্যুকে এক লাখের মধ্যে ঠেকাতে পারাকে সফল্য মনে করছেন প্রেসিডেন্ট। করোনাভাইরাস কবলিত আমেরিকায় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব পালনের নির্দেশ বর্ধিত করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আমরা আমাদের জীবনে চাঞ্চল্য ফিরে চাই!
তবে কবে এ চাঞ্চল্য ফিরবে , প্রেসিডেন্ট নিজেও জানেন না। স্বীকার করেছেন, মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে! পরের দুই সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে আশঙ্কা করে আশাবাদ করেছেন, ১ জুনের মধ্যে দেশ ঘুরে দাঁড়াবে।

আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এলার্জি এন্ড ইনফেক্সাস ডিসিজ’-এর প্রধান এন্থনি ফাউসি’র বরাত দিয়ে আগামী দুই সপ্তাহে আমেরিকায় গণ মৃত্যুর আশঙ্কার কথাই জানিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় সব রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লেও বেশী আক্রান্ত নিউইয়র্কে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ৭জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কেবল ২৮শে মার্চ রবিবারেই। নিউজার্সির প্যাটার্সনের ও মিশিগান থেকে অপর দুই প্রবাসী নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নগর জনপদ অচল থাকায় সব সংবাদ সংগ্রহ করাও দুরূহ হয়ে উঠেছে। নিউইয়র্ক নগরীতে রবিবার রাত দশটা পর্যন্ত ৭৭৭ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। সোমবারের মধ্যেই এ সংখ্যা হাজার পেরিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

সংখ্যা প্রতি ঘণ্টায় বদলে যাচ্ছে। নগরীর মেয়র ডি ব্লাজিও বুধবারের মধ্যে ৪০০ ভেন্টিলেটর পাঠানোর জন্য ফেডারেল সরকারের প্রতি জোর আবেদন জানিয়ে বলেছেন, না হলে বহু জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ম্যানহাটনের পশ্চিমদিকের জলাধারে ১০০০ বেডের নেভী হাসপাতালে আগামীকাল থেকেই করোনা নয়, এমন রোগীদের স্থানান্তর করা শুরু হবে। নিউইয়র্কের প্রবাসীবহুল কুইন্সে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। একদিন আগেই নগরীর কুইন্সে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৭৩৭, ব্রুকলিনে ৮ হাজার ৮৮৭ জন, ব্রংকসে ৬২৫০, ম্যানহাটনে ৫৫৮২ এবং স্টেটেন আইল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৮৪ ছাড়িয়ে গেছে।

কমিউনিটির চেনাজানা এসব লোকজনের বাইরে আরো প্রবাসীর মৃত্যু হতে পারে বলে ধারনা করছেন অনেকেই। সীমাবদ্ধতার জন্য এসব মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করা দুরূহ হয়ে উঠেছে। প্রবাসী কমিউনিটির চেনাজানা বহু লোকজন এরমধ্যেই হাসপাতালে আছেন। নিউইয়র্কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সেন্ট্রাল পার্কে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মাউন্ট সিনাই হাসপালের কাছে আইসিইউ ইউনিটসহ ৬৮ বেডের এ হাসপাতালে মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে বলে মেয়র ডি ব্লাজিও জানিয়েছেন। নিউইয়র্ক নগরীর জরুরী বিভাগের অ্যাম্বুলেন্স ২৪ ঘণ্টায় ছয় হাজারের বেশী ইমার্জেন্সি রোগীর ডাকে সাড়া দিতে হয়েছে।

করোনাভাইরাসের এ মহামারীর সময় রাজ্য গভর্নর এবং মেয়র সার্বক্ষণিক নাগরিকদের পাশে আছেন। সংকট মোকাবেলায় গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমোকে রাজ্যের লোকজন হিরো হিসেবে মনে করছেন। সংকটে রাজ্যের নাগরিকের পাশে থেকেই শুধু নয় ফেডারেল সরকার আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে এন্ড্রু ক্যুমো নাগরিকদের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছেন। রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে কিছুটা হলেও আশার কথা শুনিয়েছেন রাজ্য গভর্নর। তিনি বলেছেন ১৬ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত যে হারে করোনাভাইরাসের রোগীর আগমন ঘটেছিল হাসপাতালে ,তা এখন কিছুটা কমেছে।
আগে চার দিনে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছিলো। ক্যুমো জানিয়েছেন, এখন ছয়দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে। নিউইয়র্কের হাসপাতালে কর্মরত লোকজনের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, অপরীক্ষিত ঔষধ হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লরোকুইন করোনাভাইরাসের রোগীকে ব্যবহারের কারণে অনেক মৃত্যু ঘটছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ম্যালেরিয়া রোগে ব্যবহার করা এ ঔষধ নিউইয়র্কের হাসপাতালে রোগীদের উপর ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগী ইচ্ছে করলে এর ব্যবহার প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। বর্তমান বাস্তবতায় এ ঔষধের ব্যবহার নিয়ে কোন চিকিৎসক অন রেকর্ড কথা বলতে চাননি।