বিড়ম্বনাদায়ক যে দশটি জিনিসে ভারত শীর্ষে রয়েছে, যেগুলি আপনাকে মোটেও গর্বিত করবে না

0
1906

ভারত একটি ক্রমবর্ধমান মহাশক্তির দেশ এবং আমরা এগিয়ে চলেছি ২০৫০ সালে আমেরিকাকে অতিক্রম করে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ হওয়ার জন্য। ভারত আজ বিশ্বব্যাপী কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করে এবং প্রতিটি দেশ নিজেদের চাহিদার কারণে আমাদের দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। ভারত প্রায়শই তালিকাভুক্ত সমস্ত তালিকাতে তার উপস্থিতি প্রকাশ করে, এটি হ’ল কোটিপতিদের তালিকা, দেশগুলি যেগুলি মঙ্গল গ্রহে অভিযান করেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি তৈরি করেছে এবং আমদের ভারতীয়দের এই বিষয়গুলি নিয়ে গর্ব থাকা উচিৎ এবং গর্ববোধ করা উচিৎ। কিন্তু ভারতবর্ষের আরেকটি অংশ আছে যা আমরা সর্বত্র কৃতিত্বের সাথে উপেক্ষা করি। অনেকগুলি অঞ্চলে এখনো ভারত আছে যা অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে এবং যতক্ষণ না আমরা সেই দুর্বলতাগুলি সমাধান করি, আমাদের উন্নয়ন কিছুটা অর্থহীন হয়ে যায়।

যদিও এটি একটি অসম্পূর্ণ তালিকা, এখানে আমরা ১০টি বিব্রতকর তালিকার সামনে রেখেছি যেখানে ভারতের শীর্ষস্থান রয়েছে।

এটার মাধ্যমে কোনোভাবেই দেশের সমালোচনা করছি না আমরা, কিন্তু এটা একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ যেখানে আমাদের এখনও অনেক কাজ করতে হবে।

১. ওজোন স্তরের দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু

source

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত গ্লোবাল এয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত ওজোন দূষণের কারণে অকাল মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি এবং ২০১৫ সালে ২.৫৪ লাখ মানুষ ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে মারা যায়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ গুণ বেশি এবং ভারতের বরাবরের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের চেয়ে ২১ গুণ বেশি।

২. সেলফি নেওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু

source

যদিও সেলফি ম্যানিয়া সারা পৃথিবীকে ঝড় তুলে দিয়েছে, তবুও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্মে আরো বেশি লাইক, কমেন্ট পেতে ভারত এই একুশ শতাব্দীতে এসে সর্বোচ্চ মূল্য পরিশোধ করছে বলে মনে হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারত এর ইন্দ্রপ্রস্থ ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি, দিল্লি ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে ২০১৪ সালের মার্চ থেকে  ১২৭ জনের নিশ্চিত মৃত্যুর কারণ হয়েছে সেলফি যার মধ্যে ৭৬ জন ব্যক্তি ভারতের ছিলেন। ৯ জন মৃত্যুর সাথে পাকিস্তান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

৩. সর্বোচ্চ ইন্টারনেট শাটডাউন

source

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সময়কালে মোট ২২ টি ইন্টারনেট শাটডাউন হয়েছিল, যাতে ভারতের ৬০০০ কোটি টাকার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য শাটডাউন সংখ্যা ছিল অনেকটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ ইরাকের মতোই। ভারত ও ইরাক অনুসরণ করে সিরিয়া (আইএসআইএস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল ব্যতীত), পাকিস্তান, তুরস্ক এবং ব্রাজিল।

৪. সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ

source

বিশ্বব্যাংকের মতে, ভারতীয় জনসংখ্যার ৩০% লোক দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করে এবং দৈনিক ১২৫ টাকার কম আয় করে।২২৪ মিলিয়ন দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী লোকজন নিয়ে ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে যা প্রায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা নাইজেরিয়ার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নাইজেরিয়া, যেখানে ৮৪ মিলিয়ন লোক দারিদ্রসীমার নিচে রয়েছে এবং দৈনিক আয় করে $১.৯০

৫. সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পথ দুর্ঘটনা

source

খারাপ রাস্তাকেই দায়ী করুন বা বাজে ড্রাইভিংকেই দায়ী করুন আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পথ দুর্ঘটনা হয়। এই কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়কড়িও স্বিকার করেছেন। বিবিসি কর্তৃক এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ৪০০ জন মারা যায়। ২০১৫ সালে ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪৬,১৩৩ জন মারা যায়, ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩৯,৬৭১।

৬. এশিয়া মহাদেশে সর্বোচ্চ ঘুষের হার

source

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৬৯% অংশগ্রহণকারী অন্তত একবার সরকারি সেবা গ্রহণের জন্য ‘চা খাওয়ার অর্থ’ প্রদান করেছেন। এশিয়া মহাদেশের ১৬ টি দেশে এই সার্ভে করা হয়, ভিয়েতনাম দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে ৬৫% এর ঘুষের হার নিয়ে। সর্বনিম্ন হার জাপানে রেকর্ড করা হয়েছিল যেখানে শুধুমাত্র ০.২% মানুষ আছেন যারা ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

৭. আধুনিক দাসদের সর্বোচ্চ সংখ্যা

source

ভারতে ১৮.৩৫ মিলিয়ন মানুষ রয়েছে যারা দাসত্বের আধুনিক রূপে  যাদের জোরপূর্বক শ্রম, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষা ইত্যাদি করানো হয় এবং সারা বিশ্ব জুড়ে মোট ৪৫.৮ মিলিয়ন লোক রয়েছেন এইভাবে। ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত গ্লোবাল স্লেভারি ইন্ডেক্স অনুসারে, ভারতে চীনের তুলনায় দাসত্বের যাঁতাকলে আটকে রয়েছেন ছয় গুণ বেশি মানুষ, চীন ৩.৩৯ মিলিয়ন মানুষের সাথে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পাকিস্তান তৃতীয় স্থানে রয়েছে ২.১৩ মিলিয়ন দাসত্ব করা মানুষ নিয়ে এবং বাংলাদেশে ১.৫৩ মিলিয়ন মানুষ দাস হিসেবে বসবাস করে চতুর্থ।

৮. সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ক্ষুধার্ত মানুষ

source

এই ক্ষেত্রে ভারত কিছুটা উন্নতি সাধন করেছে। ১৯৯০-৯২ সালে যে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ২১০.১ মিলিয়ন, ২০১৪-১৬ সালে সেই সংখ্যা কিছুটা কমে ১৯৪.৬ মিলিয়ন হয়। তবে এখনও দেশের সর্বত্র সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত মানুষ না খেয়ে ঘুমোচ্ছে। এই ক্ষেত্রে চীন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের শেষ নাগাদ তাদের ক্ষুধার্ত জনসংখ্যার ১৩৩.৮ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে, ১৯৯০-৯২ সালে এই সংখ্যা প্রায় ২৮৯ মিলিয়ন ছিল। বিশ্বব্যাপী, ক্ষুধার্ত জনসংখ্যা্র পরিমাণ ১৯৯০-৯২ সালের ১ বিলিয়ন থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কমে ৭৯৫ মিলিয়নেরও কম হয়েছে।

৯. সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইন্টারনেটের সাথে অপরিচিত মানুষ

source

২০১৬ সালের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, ইন্টারনেটে অ্যাক্সেস না থাকা ১০৬৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার সঙ্গে ভারতের সর্ববৃহৎ অফলাইন জনসংখ্যা রয়েছে। ৭৫৫ মিলিয়ন মানুষের সাথে চীন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। অদ্ভুতভাবে, ভারত বিশ্বের অন্যতম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পণ্য রপ্তানিকারক। সরকারের ডিজিটাল ভারত উদ্যোগের সাথে, এটা দেখতে আকর্ষণীয় হবে যে আমরা আসন্ন বছরগুলোতে কতটা উন্নতি করি।

১০. এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে কম ইন্টারনেট স্পিড

source

২০১৬ সালের বছরটি ভারতে কিছু গতি নিয়ে আসে এবং আমরা বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট গতির র‍্যাঙ্কিংয়ে ১১৪ তম থেকে ১০৫ তম স্থানে উঠে এলাম কারণ এভারেজ ইন্টারনেট স্পিড ৩.৫ এমবিপিএস থেকে ৪.১ এমবিপিএস পর্যন্ত উন্নীত হয়। কিন্তু এখনও, ইন্টারনেট গতির দিক দিয়ে ভারত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেষ স্থানে রয়েছে। ২৬.৩ এমবিপিএস গতির সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।

এইগুলিই ছিল ভারতের কয়েকটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা। আপনাদের মতামত কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Source