বাংলাদেশ হল সেই সমস্ত সীমিত সংখ্যক মুসলিম প্রধান দেশগুলির মধ্যে একটি যেখানে পতিতাবৃত্তি বৈধ। এই দেশের টাঙ্গাইল জেলাতে একটি পতিতালয় রয়েছে যা প্রায় ২০০ বছরের বেশি পুরনো। কান্দাপাড়া পতিতালয়টি দেশের সবচেয়ে পুরনো পতিতালয় এবং দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। ২০১৪ সালে এটি ধ্বংস করা হলে সেখানেই বেড়ে উঠা মহিলারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। কারণ তাদের যাওয়ার মত অন্য কোনো জায়গা ছিল না। পরবর্তীকালে এটি পুনরায় শুরু হয়। অনেক পতিতাই ওখানে বরাবরের জন্যই থাকতেন, কাউকে কাউকে তাদের পরিবার বিক্রি করে দিয়েছিল পতিতাবৃত্তির জন্য, আর বাকিদের বেশিরভাগকেই অপহরণ করা হয় বিভিন্ন গ্রাম থেকে। জার্মানির এক চিত্র সাংবাদিক সান্দ্রা হোইন কান্দাপাড়ার এই যৌনপল্লী ঘুরে দেখেন এবং সেখানকার যৌনকর্মীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন ।
তিনি এই যৌনপল্লী ঘুরে দেখে বলেন যে, “পতিতালয়টি দুই মিটার প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত। সংকীর্ণ রাস্তা, খাওয়ার স্টল, চা-এর দোকান এবং রাস্তায় অন্যান্য বিক্রেতারা আছে। এই পতিতালয়ে নির্দিষ্ট কিছু পরিচালক রয়েছে আর রয়েছে নিজস্ব কিছু নিয়মাবলী যা সমাজের মূলস্রোত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।”
এখন পড়ে দেখুন সেই সমস্ত যৌনকর্মীদের কথা যারা এই কান্দাপাড়া পতিতালয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন।
১. কান্দাপাড়া পতিতালয়

এই যৌনপল্লীটি অনেক বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে। দেখে মনে হতে পারে, শহরের মধ্যে আরেক শহর রয়েছে। সংকীর্ণ রাস্তা, চায়ের দোকান, অন্যান্য খাওয়ার স্টল ও বিক্রেতাদের নিয়েই তৈরি হয়েছে এই যৌনপল্লী।
২. যৌনপল্লীর মধ্যে আসা গ্রাহকরা

বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের সাথে স্বাভাবিক নাগরিকের মত ব্যবহার করা হয়না। গরীব মেয়েদের দিয়ে জোরপূর্বক করানো হয় পতিতাবৃত্তি। এই সব মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করেন এক মাসি। যৌনকর্মীদের বাইরে যাওয়ার কোনো অনুমতি থাকে না। যৌনকর্মীদের রোজগারের অধিকাংশটাই দিয়ে দিতে হয় তাদের নিয়ন্ত্রণকারী মাসিকে।
৩. মেঘা একজন কাস্টমারের সাথে

মেঘা, ২৩ বছর বয়সী একজন মেয়ে। যে ১২ বছর বয়সে একটি কাপড় তৈরির কারখানায় কাজ করতো। তাকে বেশি মাইনের কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় এই পতিতালয়ে।
৪. সরকারি মতে বয়স

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন যৌনকর্মীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়া উচিত কিন্তু এখানে বেশিরভাগ যৌনকর্মীর বয়স তার চেয়ে কম হয়। বেশিরভাগ সময় অল্পবয়সী মেয়েদের ওরাডেক্সন (যেটি পশুদের মোটা করার জন্য প্রধানত ব্যবহার করা হয়) নামের একটি স্টেরয়েড দেওয়া হয়, যাতে তারা দ্রুত মোটাসোটা হয়ে যায় এবং বয়স্ক মনে হয়। সবচেয়ে ক্ষতিকারক সময় ১২-১৪ বছর বয়সী মেয়েদের ব্যবহার করা হয় যৌনবৃত্তিতে।
৫. আসমা একজন কাস্টমারের সাথে

আসমা, ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ে যার জন্ম হয় এই পতিতালয়েই। সে স্কুলে যেত, কিন্তু সেখানে বাকি ছাত্ররা তাকে উত্যক্ত করত তার মা একজন যৌনকর্মী বলে। বর্তমানে সে একজন যৌনকর্মী, আগে সে যৌনপল্লীর গ্রাহকদের সামনে নাচ দেখাতো।
৬. একজন কাস্টমার প্রিয়াকে চুম্বনের চেষ্টা করছে

প্রিয়া কান্দাপাড়ার যৌনপল্লীতে কাজ শুরু করে ১৭ বছর বয়সে।
একজন যোনকর্মীর তার রোজগার খুঁজে দেওয়ার ঋণ পরিশোধ করতে প্রায় ৫ বছর লাগে। তারপর সে একজন স্বাধীন যৌনকর্মী হয়, সে নিজের ইচ্ছেমতো কাস্টমারকে প্রত্যাহার করতে পারে। তার আগে অবধি মাসির কথায় শেষ কথা।
সান্দ্রা বলেন যে, “একজন যৌনকর্মী যখন সে তার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে দেয় তখন মুক্তি পায়। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পরেও তারা সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারে না, কারণ তারা কলঙ্কিত এবং কখনো কখনো পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য তারা সেখানে রয়েই যায়।”
৭. কাজল তার ছ’মাস বয়সী সন্তানের সাথে

কাজল তার ছ’মাসের কন্যাসন্তান মেহেদিকে নিয়ে খাটে বসে রয়েছে। মেয়ের জন্মের দু’সপ্তাহ পর থেকেই তাকে জোর করা হয় গ্রাহকের সাথে যৌনকর্ম করার জন্য কারণ গর্ভবতী থাকাকালীন তার ব্যবসা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজলের মনে হয় তার বয়স এখন ১৭ বছর হবে কারণ সে নিজেও জানে না। যখন তার ৯ বছর বয়স তখন তার কাকি তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় এবং এও পতিতালয়ে এসে বিক্রি করে দেয়।
সান্দ্রা বলেন, “প্রথম প্রথম এই ছবিগুলি তুলতে তাকে খুব অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল কারণ ধনি পরিবারের লোকেরা তাদের মুখ প্রকাশ্যে আনতে চায় না। আর বাকিদের এসব ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো ইচ্ছেই ছিল না, কারণ তাদের বিশ্বাস তার মজা করতে এসেছে, এতে লুকানোর কি আছে, কেউ যদি ছবি তোলে তো কি হবে।”
৮. পাখি একজন কাস্টমারের সাথে

পাখি, ১৫ বছর বয়সী এক যৌনকর্মী তার গ্রাহকের সাথে একটি ঘরে রয়েছে। ১৪ বছর বয়স থেকে সে এখানে রয়েছে। ১২ বছর বয়সে পাখির বিয়ে হয়ে যায়, কিছু কারণবশতঃ সে বিয়ের কিছু সময় পর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসে। তারপর রাস্তায় এক লোক আশ্রয় দেওয়ার নাম করে তাকে এখানে বিক্রি করে দিয়ে যায়।
সান্দ্রার মতে, এখানকার অনেক মেয়েই তাদের ছবি তুলতে দেয়নি এবং তাদের জীবনের গল্প বলতে চায়নি, বাকিরা কোনোরকম আপত্তি ছাড়াই জীবনের সমস্ত গল্প বলে।
৯. সুমাইয়া তার কাস্টমারের সাথে

সুমাইয়ার বয়স ১৭ বয়স, এই ছেলেটি তার নিয়মিত কাস্টমার আর বয়ফ্রেন্ডও বটে। ছেলেটির না তিতু, যার বয়স ২৩ বছর, বাড়ি ঢাকাতে। সে প্রতি মাসে এক সপ্তাহের জন্য সুমাইয়ার কাছে আসে।
যৌনতার বদলে পারিশ্রমিকের পরিমাণ নির্ভর করে মেয়েটির বয়স, সৌন্দর্য এবং সে যে ঘরে থাকে সেটি কতটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তার উপর।
১০. সুমাইয়া মার খাওয়ার পর

সুমাইয়ার সাথে প্রায়শই তিতুর ঝগড়া হয়, মার খেতে হয় সুমাইয়াকে। তিতু বিয়ে করতে চায় মেয়েটিকে কিন্তু মেয়টি ভয় পায়, যদি বিয়ের পর ছেলেটি তার সমস্ত টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। তিতুর রাগের কারণ, সুমাইয়া তিতুর বন্ধুদের সাথেও সেক্স করে। সুমাইয়ার রাগের কারণ, তিতু ওই নিষিদ্ধ পল্লীর অন্য মেয়েদের সাথেও সেক্স করে।
“তাদের বেশিরভাগই দুঃখজনক গল্প কিন্তু তারা খুব শক্তিশালী, অন্তত বাহ্যিকভাবে। এই অবস্থার অধীনে তাদের জীবন পরিচালনা এবং হতাশ না হওয়া সত্যিই প্রশংশার যোগ্য। তারা শুধু বেঁচে আছে বা প্রতারিত হয়েছে এমনটা নয়। তারা তাদের নিজস্ব উপায়ে উপভোগ করছে এবং দিব্যি জীবন কাটাচ্ছে”, সান্দ্রা বলেন।
১১. বন্যা, একজন যৌনকর্মী

বন্যা, ২৭ বছর বয়সী হাতে কন্ডোম নিয়ে প্রাণখুলে হাসছে। যখন তার ৭ বছর বয়স, তার সৎ বাবা তাকে ধর্ষণ করে। ১০ বছর বয়সে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। রাস্তায় এক লোক তাকে ধরে এই যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দিয়ে যায়। বন্নার নিয়মিত দু’টো কাস্টমার থাকে, তার প্রতিদিন রোজগার হয় প্রায় ১৫০০ টাকা।
“যখন এই মহিলারা ফাঁকা সময় কাটায় তখন তারা নাচে এবং হাসাহাসি করে একসাথে। তারা সময়ে সময়ে এবং তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে একে অপরের সাথে ঠাট্টা করে। মেয়েগুলি প্রাণবন্ত এবং আনন্দদায়ক হয়। প্রায়ই, তারা তাদের দুঃখ ভুলে যায়। তারা এখনও স্বপ্ন আছে”, সান্দ্রা জানান।
১২. পাপিয়া তার দু’জন কাস্টমারের সাথে

পাপিয়া ১৮ বছর বয়সী এবং উপরে ছবিটিতে সে একটি বিছানায় শুয়ে আছে তার দুই গ্রাহকের সঙ্গে। তার ছোটবেলায় বাবা মা মারা যান। পাপিয়া ও তার স্বামী হেরোইন আসক্ত হয়েছিলেন। পাপিয়ার জেল হয়েছিল, জেলেতে তার এক মহিলার সাথে দেখা হয়, সে পাপিয়াকে এই জায়গায় নিয়ে আসে।
“এখানকার বেশিরভাগ মেয়েই যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে চায় এবং তারা তাদের নিজস্ব বাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখে। তারা পুরুষদের উপর নির্ভর করতে চায় না। তারা তাদের শিশুদের একটি ভাল স্কুলে শিক্ষা দিতে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করতে চান। তারা তাদের ভাল ভবিষ্যত চান”, সান্দ্রা বলেন।
১৩. প্রিয়া তার বন্ধুকে মারার চেষ্টা করছে

প্রিয়া, ১৯ বছর বয়সী এক যৌনকর্মী। সে তার বন্ধুর সাথে খুনসুটিতে মেতেছে।
“অনেক মহিলা আছেন যাদের বয়ফ্রেন্ড রয়েছে বা নিয়মিত গ্রাহক থাকে যারা তাদের অর্থ প্রদান করে। আমি একজন মহিলাকে জানি যে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ক্লায়েন্টের বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে কারণ সে মনে করে, ছেলেটি তার টাকা নিয়ে নেবে। তিনি বরং একজন যৌনকর্মী হিসাবে তার স্বাধীনতা বজায় রাখতে চাইছেন।”, সান্দ্রা বলেন।
১৪. কান্দাপাড়ার বাইরে পড়ে থাকা ব্যবহৃত কন্ডোম

সান্দ্রা বলেন, “যে মহিলাটি আগে কাপড়ের কারখানায় কাজ করতো সে এখানেই থাকতে আগ্রহী, কারণ এখানে টাকা বেশি পাওয়া যায়”।
১৫. দীপা, একজন যৌনকর্মী

দীপা, ২৬ বছর বয়সী এক যৌনকর্মী। তার কষ্টের ছবি ধরা পড়েছে এই ছবিতেই যেখানে সে কাঁদছে। সে দু’মাসের গর্ভবতী যখন ছবিটি তোলা হয়।
১৬. সামাইয়া তার ঘরের সামনে

১৭. নিজদের মধ্যে মারমারি করছে দুই যৌনকর্মী

১৮. রুপার নাচের ভিডিও করছে এক কাস্টমার

১৯. খোশগল্পে ব্যস্ত পাখি আর মিম

২০. কাজল তার কাস্টমারের সাথে

ছবিগুলি সংগৃহীত Sandra Hoyn Photography থেকে। আপনাদের মতামত কমেন্ট করে জানাতে পারেন।