মুখ্য়মন্ত্রী জানিয়ে দিলেন রাজ্য়ে করো’না সংক্রমণ রুখতে হটস্পট বলে কিছু হচ্ছে না। তবে স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে শুধু বিশেষ নজরদারি চালাবে প্রশাসন। মূলত কোনও জেলায় ছয় জনের বেশি মানুষ করো’না ভাই’রাসের দ্বারা সংক্রমিত হলেই হটস্পট ঘোষণা করা হচ্ছে। এই সকল জায়গার বাসিন্দাদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। অন্য রাজ্যে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত এলাকাগুলিকে ‘হটস্পট’ নামকরণ করা হলেও, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের চিহ্নিত এলাকাগুলিকে ‘স্পর্শকাতর’ নামে অভিহিত করেছেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, যে এলাকা গুলিতে খুব কম ভৌগোলিক ব্যবধানে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সেই জায়গা গুলোকেই স্পর্শকাতর বলা হচ্ছে। যেমন, কালিম্পং। ওই জেলাতে একই পরিবারের ১১ জনের মধ্যে সংক্রমণ হয়েছে।

তেমন পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা। সেখানেও একটি বিয়ে বাড়ি থেকে সাত জনের সংক্রমণ হয়েছে। এ ভাবেই সংক্রমণের উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে বিরাটি, বেলঘড়িয়া, হাওড়া এবং কলকাতার কয়েকটি এলাকায়। করো’না রুখতে এবার রাজ্য়ের ৮ থেকে ১০টি অঞ্চলে পুরোপুরি লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন নিয়মে করো’না স্পর্শকাতর নির্ধারিত অঞ্চলেই কমপ্লিট লকডাউনের পথে হাঁটবে নবান্ন। কী থাকছে নতুন এই নিয়মে। রাজ্য প্রশাসন ওই চিহ্নিত জায়গাগুলো পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে সিল করা হয়েছে বলে মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, ওই নির্দিষ্ট এলাকাগুলিতে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে।

গত তিন সপ্তাহ ধরে যে সব এলাকা থেকে বেশি করো’না সংক্রমণের কেস আসছে, সেই এলাকা গুলিকেই প্রথমের তালিকায় রাখা হচ্ছে। শুক্রবার এই বিষয়ে কলকাতা পুরসভা ছাড়াও জেলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে আলোচনা করেন মুখ্য়সচিব। পুরসভা ও জেলার প্রতিনিধিদের এইসব এলাকার পরিধি ও জনসংখ্য়া সম্পর্কে তথ্য রাখতে বলেন তিনি। পাশাপাশি ১০ করো’না হট স্পটে লকডাউন হলে ঢোকা -বেরোনোর পথ কী হবে তাও বিবেচনা করে রাখতে বলেন তিনি।

যেমন হাওড়া পুর এলাকার কয়েকটি এলাকা। হাওড়া হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, ফোরশোর রোডের একটি অংশ, উত্তর হাওড়ার কয়েকটি অংশ, মল্লিক ফটক এলাকা। হাওড়া পুরসভার পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি আনাজ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ রকম প্রায় ৩০টি ঘনবসতি পূর্ণ গলি শনিবারই চিহ্নিত করে আলাদা করা হয়েছে। ব্যারিকেড করা হয়েছে ওই এলাকাগুলিতে ঢোকা বেরনোর রাস্তায়। জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে রাস্তাঘাট। সেই সঙ্গে কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে মানুষের যাতায়াত। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরতে নিষেধ করা হচ্ছে বাসিন্দাদের। জমায়েত করতে দেখা গেলে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।

এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম asianetnews বাংলার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মুখ্য়সচিব বলেছেন করো’নার হটস্পট নির্ধারিত এলাকাগুলির নাম রাজ্য় সরকার জানাচ্ছে না। এতে মানুষের মধ্য়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হতে পারে। তবে নবান্ন সূত্রে খবর, আলিপুর, পন্ডিতিয়া রোড, মুদিয়ালি, বড়বাজার, নয়াবাদ, উত্তর ২৪ পরগণার বেশকিছু অঞ্চল, বেলঘড়িয়া, হাওড়ার শিবপুর ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরের এগড়াও কালিম্পংয়ের ওপর বিশেষ নজরদারি চালানো হতে পারে। এইসব এলাকাগুলিকেই পুরোপুরি লকডাউনের আওতায় আনতে পারে রাজ্য়।

একই রকম নিয়ন্ত্রণ বিধি চালু করা হয়েছে বিরাটি এলাকার একটি ওয়ার্ডে এবং বেলঘড়িয়ার একটি এলাকায়। প্রশাসন সূত্রের খবর, এলাকা চিহ্নিত করার মূল উদ্দেশ্য যাতে ওই এলাকার মানুষের সংস্পর্শে অন্য এলাকার কেউ না আসেন। পাশাপাশি ওই এলাকার সব বাসিন্দার যাতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যায় এবং নজর রাখা যায় স্বাস্থ্যের উপর। ওই মূল উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে যেখানে যেমন নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন তাই করছে প্রশাসন।

আরো এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পর কোনও একটি এলাকা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। আবার সংযোজিত হতে পারে নতুন এলাকা। তবে তা কোনওভাবেই এলাকা ‘সিল’ বলে আখ্যা দিতে নারাজ প্রশাসনের কর্তারা।