আপনি কি জানেন ভারতীয় রেল চাকুরিতে নিয়োগকর্তার নিরিখে সারা বিশ্বে নবম স্থানে রয়েছে? ২০১৭ সালের মার্চ মাস অবধি হিসেব অনুযায়ী ভারতীয় রেলের কর্মচারীর সংখ্যা ১.৩০৮ মিলিয়নেরও বেশি। সারা বিশ্বে রেল নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ভিত্তিতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারতীয় রেল আর এই ব্যাপারটি আমাদের অনেকেরই অজানা। উদাহরণস্বরুপ যদি ট্রেন যাত্রার কথা বলা হয়, তাহলে বর্তমান দিনে দেখা যায় অনেকেই সময় বাঁচানোর তাগিদে বিমানে করে যাতায়াত করেন। কিন্তু ট্রেন যাত্রার মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ রয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রেনে বসে থাকা, গান শোনা, ম্যাগাজিন পড়া আর ট্রেন থেকে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করা, এসবের মধ্যে একটা আলাদা মজা রয়েছে। আজ আপনাদের ভারতীয় রেলের এমন কয়েকটি যাত্রাপথের কথা বলবো, যেগুলি সত্যিই অসাধারণ এবং সুযোগ পেলে রেলের এই যাত্রাপথগুলির অবশ্যই মজা নেওয়া উচিৎ।
আসুন দেখে নেওয়া এরকমই কয়েকটি ট্রেনের যাত্রাপথ যেগুলি সত্যিই দৃষ্টিনন্দক এবং আকর্ষক –
১. কালকা-সিমলা যাত্রাপথ

কালকা থেকে সিমলা ৯৬ কিলোমিটারের দূরত্বের এই রেলপথটি একটি ন্যারোগেজ রেললাইন। এই যাত্রাপথ সম্পূর্ণ করতে ট্রেনের সময় লাগে ৫ ঘন্টারও বেশি। এই রেলপথে ১০২টি টানেল এবং ৮২টি ব্রিজ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নিবিড় সবুজের আচ্ছাদন। ফটোগ্রাফারদের জন্য একেবারে আদর্শ রেলের এই যাত্রাপথ।

আর শীতকালে এই যাত্রাপথটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
২. যোধপুর-জয়সলমীর যাত্রাপথ

জয়সলমীর থেকে দিল্লী পর্যন্ত প্রসারিত এই রেলপথ। আপনার চোখ যতদূর দেখতে পারে ততদূর প্রসারিত বালি তল, উট এবং বর্বর শুষ্ক মরুভূমির সুন্দর অংশটি নজরে আসে।

রেলপথের এই অংশটিকে ‘ডেজার্ট ক্যুইন’ও বলা হয়, প্রায় ৬ ঘন্টা লম্বা এই যাত্রাপথ।
৩. দার্জিলিং-হিমালয় সংলগ্ন যাত্রাপথ

নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং অবধি ৭৮ কিলোমিটারের এই যাত্রাপথ সম্পূর্ণ করতে প্রায় ৮ ঘন্টা সময় লাগে। এই যাত্রাপথে শিলিগুড়ি, কার্সিয়াং, সুকনা, রাংটং, বাতাসিয়া লুপ ইত্যাদি ছবির ন্যায় সুন্দর জায়গাগুলিকে চাক্ষুষ করা যায়।

হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ কখনোই হাতছাড়া করা উচিৎ নয়।
৪. মান্দোভি এক্সপ্রেসের যাত্রাপথ

১১ ঘন্টার এই রেলযাত্রায় অজস্র টানেল, ব্রিজ এবং ঝর্ণা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নিবিড় সবুজ অরণ্য এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মনোরম সৌন্দর্য্য। মুম্বাই থেকে গোয়া অবধি এই রেলযাত্রায় ট্রেন মরগাও, থানে, রত্নাগিরির মতো জায়গা দিয়ে যায়।

এই রেলপথে যাতায়াতের সেরা সময় হল বর্ষাকাল, সবুজের আচ্ছাদন আপনার মন হরণ করবেই।
৫. গুয়াহাটি-শিলচর যাত্রাপথ

এই ট্রেনটির যাত্রাপথ আসামের ডিব্রুগড় থেকে পশ্চিমবঙ্গের লালগড় জংশন অবধি। ৩১১৮ কিলোমিটারের যাত্রাপথের মধ্যে আসামের গুয়াহাটি থেকে শিলচর অবধি যাত্রাপথটি অতুলনীয়।

যাতিঙ্গা নদী, চা বাগান, বারাক ভ্যালি আর গাড় সবুজের বুক চিড়ে ছুটে চলে ট্রেনটি।
৬. ব্যাঙ্গালোর-কন্যাকুমারী যাত্রাপথ

ব্যাঙ্গালোর এবং কানকুমারীর মধ্যে যোগাযোগের এই ট্রেনটি ১৯ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ৯৪৪ কিলোমিটার দূরত্ব পার করে। এটি একটি জাদুকরী যাত্রা যা আপনাকে দীর্ঘস্থায়ী জল এবং বিভিন্ন অন্যান্য স্থানের উপরিভাগে গ্লাইডিংয়ের অনুভূতি দেয়।
৭. নীলগিরি-উটি যাত্রাপথ

মেত্তুপালায়াম থেকে উটি অবধি ৫ ঘন্টার এই যাত্রাপথে রয়েছে ১৬টি টানেল, বনাঞ্চল, প্রায় ২৫০টির মতো ব্রিজ আর নীলগিরি পর্বতমালার উপর দিয়ে ছুটে চলে টয়ট্রেন।

এই টয়ট্রেন এশিয়ার অন্যতম খাঁড়া জায়গা (প্রায় ৭০০০ ফুট) দিয়ে চলাচল করে।
৮. শ্রীনগর-বারামুলা যাত্রাপথ

এই রেলপথটি আপনাকে তীব্র ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্য দিয়ে রোমাঞ্চ সহ হিমালয়ের সবচেয়ে দর্শনীয় দৃশ্যগুলি দেখার সুযোগ করে দেয়।
৯. হুবলী-মরগাও যাত্রাপথ

এই সুন্দর রেলপথটি আপনাকে বাকরুদ্ধ করে দেবে। এটি ৩-৪ ঘন্টার যাত্রা, তবে ৩০০ মিটার উঁচু থেকে জলপ্রবাহের বিশাল প্রবাহগুলি আপনার দৃষ্টিনন্দন করবেই।

হুবলী থেকে মরগাও এর মধ্যে যাত্রাপথে বিখ্যাত ‘দুধসাগর’ জলপ্রপাতের সৌন্দর্য্যও উপভোগ করতে পারবেন আপনি।
১০. হাসান-ম্যাঙ্গালোর যাত্রাপথ

এই ট্রেনটি হাসান ও ম্যাঙ্গালোরের মধ্যে প্রায় ২৪৪ কিমি দূরত্ব কভার করে। এবং এটি পাম গাছপালা, সুন্দর জলপ্রপাত, উঁচু পর্বত এবং ঘাসের উত্তেজনাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত।
১১. জম্মু-উধমপুর যাত্রাপথ

৫৩ কিলোমিটারের এই যাত্রাপথে আমাদের দেশের অন্যতম সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়।

চেনাব ব্রিজ যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রেলব্রিজ, সেটির অসাধারণ সৌন্দর্য্য আপনি এই যাত্রাপথেই উপভোগ করতে পারবেন।
১২. রত্নাগিরি-ম্যাঙ্গালোর যাত্রাপথ

৭৬৫ কিমির এই রেলযাত্রায় প্রায় ১৭ ঘন্টা সময় লাগে। এই যাত্রাপথে ট্রেনটি আপনাকে নিয়ে একাধিক টানেল, ভয়ঙ্কর সব ব্রিজ, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মধ্য দিয়ে। আর তার সাথে তো রয়েছেই অসাধারণ সবুজের সমারোহ।

রত্নাগিরি থেকে ম্যাঙ্গালোর গেলে এই যাত্রাপথটি কোনোভাবেই মিস করা উচিৎ নয়।
১৩. মাথেরান-নেরাল যাত্রাপথ

২ ফুট চওড়ার এই ন্যারোগেজ রেলপথটি ২১ কিমি. দূরত্বের মাথেরান ও নেরালের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে।

মহারাষ্ট্রের এটিই একমাত্র ঐতিহ্যবাহী রেলপথ যেটি আপনাকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অপরুপ সৌন্দর্য্যের সাক্ষী করবে।
১৪. তামিলনাড়ু-রামেশ্বরন যাত্রাপথ

এই যাত্রাপথে ট্রেনটি তামিলনাড়ুর মান্দাপাম থেকে রামেশ্বরন অবধি যায়, যেটি পাম্বাম দ্বীপে অবস্থিত। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্য তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার জন্য এই সেরা রেল যাত্রাপথ। এটি ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু জলের উপর সেতুর ভিত্তিতে, যেটি ভারতের মূল ভূখন্ডকে পাম্বাম আইল্যান্ডের সাথে যুক্ত করেছে।

এই যাত্রাপথের আনন্দ আপনি পরতে পরতে উপভোগ করতে পারবেন।
১৫. ভুবনেশ্বর-ব্রহ্মপুর যাত্রাপথ

একদিকে রয়েছে মালয়াদ্রির অপরুপ সৌন্দর্য আর অপরদিকে রয়েছে চিল্কা হ্রদের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। রেলযাত্রীদের জন্য একেবারে আদর্শ। হ্রদের দেখা পাওয়া যায় বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিদেরও।
এই রেলপথগুলিই ছিল আজকের আয়োজনে। ভ্রমণ-পিপাসু মানুষ যারা রেলযাত্রা পছন্দ করেন তারা অবশ্যই এই জায়গাগুলি ঘুরে দেখতে পারেন। আর আপনারা কি এর মধ্যে কোনো রেলপথ দিয়ে রেলযাত্রা করেছেন, তাহলে কমেন্ট করে জানান।